13-07-2023
রক্তদান ধর্মীয় দিক থেকে অত্যন্ত পুণ্যের ও সওয়াবের কাজ। একজন মানুষের জীবন বাঁচানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। পবিত্র কোরআনের সূরা মায়েদার ৩২ নং আয়াতে উল্লেখ আছে, ‘একজন মানুষের জীবন বাঁচানো সমগ্র মানব জাতির জীবন বাঁচানোর মতো মহান কাজ। পৃথিবীতে প্রতি মুহূর্তে মুমূর্ষু রুগির জীবন বাঁচানোর জন্য রক্তের প্রয়োজন হয়। সেই ব্যক্তি হতে পারেন আমাদের পরিচিত অথবা অপরিচিত। আপনার দেওয়া এক ব্যাগ রক্তই হয়ত বাঁচিয়ে দিতে পারে তার জীবন। অনেকেই রক্ত দিতে আগ্রহী হন না স্বাস্থ্যহানীর আশঙ্কায় অথবা নিছক ভয়ে। অথচ এই চিন্তাগুলো নিতান্তই অমূলক। রক্তদানে রক্তদাতার কখনোই স্বাস্থ্যহানী হয় না বরং মানুষের দেহে প্রতি ৪ মাস পরপর পুরাতন রক্তকণিকা নষ্ট হয়ে নতুন রক্তকণিকা তৈরি হয়। সুতরাং এই সময়ের মাঝে রক্তদানে স্বাস্থ্যহানীর কোন আশঙ্কাই নেই।
রক্তদানের প্রথম এবং প্রধান কারণ,একজনের দানকৃত রক্ত আরেকজন মানুষের জীবন বাঁচাবে। রক্তদান স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। রক্তদান করার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের মধ্যে অবস্থিত ‘বোন ম্যারো’ নতুন কণিকা তৈরির জন্য উদ্দীপ্ত হয় এবং রক্তদানের ২ সপ্তাহের মধ্যে নতুন রক্তকণিকার জন্ম হয়ে ঘাটতি পূরণ হয়ে যায়। বছরে ৩ বার রক্তদান আপনার শরীরে লোহিত কণিকাগুলোর প্রাণবন্ততা বাড়িয়ে তোলার সাথে সাথে নতুন কণিকা তৈরির হার বাড়িয়ে দেয়। উল্লেখ্য রক্তদান করার মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই দেহে রক্তের পরিমাণ স্বাভাবিক হয়ে যায়।[২] নিয়মিত রক্তদান করলে হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।[৩] আরেক গবেষণায় দেখা যায়, যারা বছরে দুই বার রক্ত দেয়, অন্যদের তুলনায় তাদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। বিশেষ করে ফুসফুস, লিভার, কোলন, পাকস্থলী ও গলার ক্যান্সারের ঝুঁকি নিয়মিত রক্তদাতাদের ক্ষেত্রে অনেক কম পরিলক্ষিত হয়েছে। চার বছর ধরে ১২০০ লোকের ওপর এ গবেষণা চালানো হয়েছিলো।[২] নিয়মিত স্বেচ্ছায় রক্তদানের মাধ্যমে নিজের শরীরে বড় কোনো রোগ আছে কিনা তা বিনা খরচে জানা যায়। যেমন : হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, সিফিলিস, এইচআইভি (এইডস) ইত্যাদি।[৩] প্রতি পাইন্ট (এক গ্যালনের আট ভাগের এক ভাগ) রক্ত দিলে ৬৫০ ক্যালরি করে শক্তি খরচ হয়। অর্থাৎ ওজন কমানোর ক্ষেত্রেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।